অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সোহেলী পারভীন ৩য় বর্ষ সম্মান (অর্থনীতি)
অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সোহেলী পারভীন ৩য় বর্ষ সম্মান (অর্থনীতি)
ব্রজমোহন
বিশ্ববিদ্যালয়
কলেজ
বিশ শতকের শেষ প্রান্তে এসে আমরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি লাভ করতে পারিনি। তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্রতায় দেশটির দিকে তাকালে এমন একটি শিশুর কথা মনে পড়ে, যে অপুষ্টিতে ভুগছে। যার শিরা-উপশিরায় রক্তের প্রবাহ নেই। একটি দেশের অর্থনীতি ক্ষেত্র কতটা সাফল্য লাভ করেছে তা সে দেশের জাতীয় আয় কিংবা মাথাপিছু আয় বা জনগণের জীবনযাত্রার মান নিরুপণ করা যায়। বস্তুত, তেমন কোনো উন্নতি আমাদের হয়নি। এশিয়ার অনেক দেশে আজ অর্থনৈতিক উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গেছে উদাহরণস্বরূপ জাপানের কথা বলতে পারি। কিছু দিন আগে ৭ জাতির বৈঠকে দেখা গিয়েছে যে জাপান কি পরিমাণ সম্পদ উদ্বৃত্ত। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি কিংবা প্রবৃদ্ধির জন্য যে উপকরণগুলি থাকা প্রয়োজন, তা কি আমাদের রয়েছে ? রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ব্যাপক উৎপাদন বা কাঁচামালের যোগান, সঞ্চয় তথা মূলধন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সর্বোপরি জনগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা তথা অধ্যাবসায় ইত্যাদি হচ্ছে অর্থনীতির চাবিকাঠি এগুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পিছনে রয়েছে।
একটু তাকালে দেখা যাবে যে বাংলাদেশ তেমন কোনো ক্ষেত্রেই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় এদেশের সকল সমস্যায় জর্জরিত। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদের সমগ্র প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলই এ সম্পর্কে সচেতন নয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী করতে হলে রাজনৈতিক দল সরকার ও জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
অর্থনৈতিক উন্নতির আর একটি দিক হচ্ছে শিল্প ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির তথা শিল্পায়ন। আর এর জন্য শিল্প বিপ্লবের আগে প্রয়োজন কৃষি বিপ্লবের। কারণ, মনে রাখতে হবে। তা না হলে ব্যয় করতে হবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।
কতগুলো দালান-কোঠা বানালে কিংবা রাজধানীকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলেলেই দেশের উন্নতি হয় না। এটাকে আমরা বলতে পারি বাহ্যিক কাঠামো (Outside Structure)। আমাদের জাতীয় আয় (GNP) ২২০ ডলার (সরকারী মতে আরও কিছু বেশি) অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় এটা নগণ্য। তবে আমরা কোন স্তরে রয়েছি? প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার, বেসরকারী খাতে ব্যাপক পুঁজি বিনিয়োগ, শিল্পজাত পণ্যের ব্যাপক উৎপাদন ইত্যাদি কোনটাই আমরা পরিপূর্ণভাবে লাভ করতে পারিনি। অথচ জাপান, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ অনেক আগেই এইসব ক্ষেত্রে পরিপুর্ণতা লাভ করেছে।
আমরা কি চেষ্টা করলে উন্নত দেশগুলোর স্তরে পৌঁছতে পারি না? কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় ও অধ্যাবসায় দ্বারা অবশ্যই তা সম্ভব। কারন উপরি-উক্ত দেশগুলো যুদ্ধ বিস্তার অবস্থা থেকে তাদের অর্থনীতি গড়ে তুলেছে। তাই আমরাও চেষ্টা করে একটি উন্নত দেশের নাগরিক হিসেবে পৃথিবীর পরিচিত হতে পারি এবং তা করতে গেলে প্রথমতঃ ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ স্তরে এগোতে হবে। ব্যষ্টিক অর্থনীতি, অর্থাৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক সমস্যা গুলো আমাদের আগে দেখতে হবে। তাই চাহিদা কতটুকু, তার কি পরিমাণ জোগান কিংবা পুঁজি আছে --এই সমস্ত কিছু চিহ্নিত করে পরে আমরা সামষ্টিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারি। এভাবে আমরা ব্যক্তির সমস্যা থেকে সমষ্টি তথা জাতীয় সমস্যাগুলো নিয়ে তার একটি স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে পারি।
পরিশেষে বলা যায় যে, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের দিক থেকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না, প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে ভাগ্যোন্নয়নের জন্য চেষ্টা করতে হবে। তবেই বাংলাদেশ "দারিদ্র দুষ্ট চক্র" থেকে মুক্তি পাবে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ পরিণত হবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।
No comments
Thanks for your comment.